জরায়ুমুখের ক্যানসার কেন হয়, বেশি ঝুঁকিতে কারা?

নারীর জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ এক শত্রুর নাম ‘জরায়ুমুখের ক্যানসার’। বিশ্বজুড়ে নারীদের ক্যানসারের তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা এই ক্যানসার বাংলাদেশেও ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে এ রোগ থেকে শতভাগ নিরাপদ থাকা সম্ভব।

গবেষণা বলছে, জরায়ুমুখে প্রাথমিক পরিবর্তন থেকে পূর্ণাঙ্গ ক্যানসারে রূপ নিতে সময় লাগে প্রায় ১০-১২ বছর। ফলে চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্যানসার সাধারণত নারীদের জীবনের দুটি পর্যায়ে হতে পারে। প্রথম পর্যায় ৩৫ থেকে ৩৯ বছর। আর দ্বিতীয় পর্যায় ৬০ থেকে ৬৯ বছর।

এ বিষয়ে স্ত্রীরোগ, প্রসূতি, নারীদের ক্যানসার ও ল্যাপারোস্কোপিক বিষয়ে খ্যাতিমান সার্জন ডা. পবিনা আফরোজ পারভীন জানিয়েছেন,দুর্গন্ধযুক্ত ঋতুস্রাব, অনিয়মিত মাসিক, সহবাসের সময় রক্তপাত, মেনোপজ (রজঃনিবৃত্তি) হওয়ার পর রক্ত যাওয়া, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ।

পবিনা আফরোজের ভাষায়, যারা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে খাচ্ছেন, অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে, কম বয়সে সন্তান নিয়েছেন, ঘন ঘন ও পাঁচটির বেশি সন্তান জন্মদান করেছেন, বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদি করছেন, তারা জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ডা. পবিনা আফরোজ বলেন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে জরায়ুমুখের ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। সবচেয়ে বেশি দায়ী ১৬ ও ১৮ সেরোটাইপ। যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এটির সংক্রমণ ছড়ায়।’

তিনি বলেন, গ্রামে ভায়া টেস্ট ও শহরে বা বড় হাসপাতালে প্যাপস স্মিয়ার, লিকুইড বেজড সাইটোলজি, কলপোস্কোপি ইত্যাদির মাধ্যমে এটি শনাক্ত করা যায়।

পবিনা পরামর্শ দেন, সুস্থ সব নারীর জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং করা জরুরি। স্ক্রিনিংয়ে ক্যানসারের সন্দেহ হলে বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে হবে। আর ক্যানসারটি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা জানার জন্য এমআরআই পেলভিস করতে হয়।

ডা. পবিনা আফরোজের মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথমে সার্জারি, পরে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি নিতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ে প্রথমে সিসিআরটি কেমোরেডি ও রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় কেমোথেরাপির পর সার্জারিও করা হয়।

ডা. পবিনা জানান, ৯-৪৫ বছর বয়সী সব সুস্থ মেয়ে ও নারী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা নিলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, সব সুস্থ নারীর ৩০ বছর বয়স থেকে স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন।

0Shares