
বাজারের একটি দোকানে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন ৭০ বছর বয়সী ধনঞ্জয় দাস। দোকানটি বাজার কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার। চায়ের ‘আড্ডা’ শেষে মাথা নিচু করে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করেন ধনঞ্জয় দাস। পথে কারো সঙ্গে ‘রা’ নেই। কেউ ধনঞ্জয়ের দিকে তাকায়ও না।
কারণটা বলতে গিয়ে ৩৬ বছর পেছনের কথা টেনে ধনঞ্জয় প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার অপরাধে কি এভাবে ৩৬ বছর ধরে একঘরে রাখতে হবে।’
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ ঘরে বসেই কথাগুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার ভোলাচং এলাকার ধনঞ্জয় দাস।বিয়ের পর থেকে এলাকার মানুষ তাদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের বাড়িতে কেউ আসে না। তাদেরকে এলাকার কোনো ধরনের আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। সমাজের অর্থাৎ দাসপাড়ার বাইরের লোকজনের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক রেখে চলেন। কাজে লাগলে তাদেরই ডাকেন।
ভোলাচং দাসপাড়ায় ২১৮টি পরিবারের বসবাস। তবে বিষয়টি নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষও মুখ খুলতে ভয় পায়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ৩৬ বছর আগে ধনঞ্জয়ের সঙ্গে তার স্ত্রীর সম্পর্কচ্ছেদ হয়। এরপর প্রতিবেশী বধূ শ্রীমতিকে তিনি বিয়ে করেন। চার সন্তান রেখে ধনঞ্জয়ের কাছে চলে আসেন শ্রীমতি। এর পরই গ্রামের মুরব্বিরা ওই দম্পতিকে একঘরে করেন। সেই থেকে তারা একলা পথিক। কেউ তাদের বাড়িতে এলে জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
ভোলাচং নতুন বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি তাদের এলাকার লোকজনকে বলেছি, যেন দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে দেন।’
ভোলাচং দাসপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি সুভাস দাস বলেন, ‘অনেক আগে মুরব্বিরা একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এ নিয়ে ধনঞ্জয় দাদাও কিছু বলেননি। এখন বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’