ডেইরি ফার্মের বর্জ্যের ভাগাড় শিকলবাহা খাল

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা খাল একসময় ছিল স্থানীয়দের জীবন-জীবিকার অংশ। সেই খালের পানি দিয়ে মানুষ চাষাবাদ করত, গোসল করত, মাছ ধরত। বিন্তু এখন সেই খাল দূষণের কারণে মৃতপ্রায়। খালজুড়ে জমেছে গোবর, মুত্র ও ডেইরি বর্জাড়া থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। খালের দুই পাশে রয়েছে প্রায় ৪০০ ডেইরি ফার্ম, যেখানে গরুর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এসব ফার্মে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় তিন হাজার মেট্রিক টন গোবর ও দুই লাখ লিটার মুত্র। এর মধ্যে মাত্র ৫০টি ফার্মে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা আছে। বাকি ৩৫০টি ফার্মের বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলায় খালটি এখন গোবরের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব নাজের আলী বলেন, “একসময় এই খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতাম। এখন দুর্গন্ধে পাশে দাঁড়ানো যায় না। “আরেক বাসিন্দা মুসলিম আলী জানান, “আগে খালে প্রচুর মাছ ছিল, এখন মাছ পাওয়া যায় না।”

কর্ণফুলী উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় মোট ৬০০ ডেইরি ফার্ম আছে, যেগুলোর বেশিরভাগই শিকলবাহা ও চরলক্ষ্যা ইউনিয়নে। ফার্মগুলোর উৎপন্ন গোবর ও মুত্রের সিংহভাগ খালেই পড়ে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, জনবল সংকটে সব জায়গায় নজরদারি সম্ভব নয়। তবে কিছুফার্মকে জরিমানা করা হয়েছে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়া নতুন ছাড়পত্র দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে।

ডেইরি ফার্ম মালিক হাবিবুর রহমান স্বীকার করে বলেন, “বর্জ্য পরিশোধনের বিকল্প না থাকায় আমরা খালে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি।”

তবে সাধারণ মানুষ মনে করেন, ‘ফার্মের মালিকরা কোটি টাকা আয় করেন, তাদেরই বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।

“উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, “ফার্ম মালিকদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ডেইরি বর্জ্য থেকে জৈব সার ও গ্যাস উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

“স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল রক্ষায় গঠিত কমিটি ও পূর্বের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। তারা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ ও কেন্দ্রীয় বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। দেড় দশক ধরে জমে থাকা বর্জ্য শুধু খালের প্রাণ নয়, পুরো এলাকার পরিবেশকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে, শিকলবাহা খাল হয়তো হারিয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়।

0Shares