শেরপুরে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও আয়নাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, তিনি ২০২২ সালে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আতাউর রহমান। জনশ্রুতি রয়েছে তিনি কাংশা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী নেতাদের সাথে আতাঁত করে নানা দুর্নীতির সাথে জড়ান। টাকার বিনিময়ে অর্থশালীদের মাঝে ভিজিডি কার্ড বিতরন ও আত্মীয় সজন ও নিকটজনদের মাঝে  ভিজিডি কার্ড বিক্রি ও বিতরন করেন।

এ ছাড়া গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন-সংস্কার কর্মসূচির কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের সরকারি অর্থ ভুয়া প্রকল্প সাজিয়ে  আত্মসাৎসহ ভিজিডি, ভিজিএফ এর চাল বিতরনে ওজনে কারচুপি ও কালোবাজারে বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগে প্রকাশ, তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার বাড়ির সামনেই আয়নাপুর বাজারে একটি ঘরকে পরিষদের স্থায়ী কার্যালয় বানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর ও পূর্বাংশের শতশত মানুষের সেবা গ্রহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

নওকুচি গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাপ হোসেন বলেন, আয়নাপুর থেকে ১০ কেজি ভিজিএফ এর চাল তার এলাকায় আনতে যাতায়াত খরচ হয় ২০০ টাকা। ফলে অনেক দরিদ্র দিনমজুর পরিবার চাল নিতে আগ্রহ করেন না।

অভিযোগ রয়েছে, ইউপি ভবন না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে মাটি ভরাটের নামে ভূয়া প্রকল্প সাজিয়ে   ২০২২-২৩ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্কার কর্মসূচির ২লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

অভিযোগে প্রকাশ, গত ২৯ মে রাতে আয়নাপুর থেকে ২১বস্তা ভিজিডির চাল পাচারকালে কারাগাঁও এলাকা থেকে আটক করে থানা পুলিশ। এব্যাপারে থানায় ভ্যানচালকের নামে একটি মামলা দায়ের করা হলেও গডফাদাররা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

জনশ্রুতি রয়েছে, আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা গারো পাহাড়ের নদী, খাল-বিল ও পাহাড় কেটে অবাধে পাথর ও বালুসহ বনজ সম্পদ লুটে মেতে উঠে। বর্তমানেও তা অব্যাহত  রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। গত এক সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে বালু ভর্তি ৩টি মাহিন্দ্রা আটক করে বন বিভাগ।

বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, লোকবলের অভাবে পাথর-বালু লুটপাট বন্ধে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে ।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পাহাড় কেটে পাথর ও বালু লুটপাট কে করছেন তা আপনারা জানেন। ইউপি চেয়ারম্যান হিসাবে পাথর-বালু লুটপাট বন্ধে আতাউর রহমান কোন ভুমিকাই  পালন করেননি।

তবে বালু-পাথর লুটপাটের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, তার দলের নেতা-কর্মিরা একাজে জড়িত থাকলেও  তিনি এসবের সাথে জড়িত নেই।

অপর দিকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কাংশা ইউনিয়নের গ্রামীন অবকাঠামো কর্মসুচির ৪টি প্রকল্পের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজ চলতি বছরের শুরুতেই কাজ শুরু করা হলেও গত কয়েক মাসেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। কাজ না করেই প্রথম কিস্তির টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। শেষ বিল তোলার জন্য নানাভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ভাইরালকারিদের সাথে আপোষ করেন চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমাকে আয়না দেখানোর চেষ্টা করবেন না। আমি বিএনপি সমর্থিত বলে এসব কিছু আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, প্রকল্পের কাজে গরমিল হওয়ায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নিবেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো, রাজীবুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজে অনিয়ম থাকায় পুরো কাজ সম্পূর্ণ করে বিল নেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। কাজ সম্পূর্ণ করার আগে তার বিল দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

0Shares