
আল্লাহ তায়ালা কেবল তাঁর বাছাইকৃত বান্দাদেরই হেদায়েত দান করেন। হেদায়েত আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ। হেদায়েত পাওয়ার পর তা ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আল্লাহর কিছু বান্দাকে দেখা যায় হঠাৎ খুব ইবাদত বন্দেগী করছেন। কিছুদিন যাওয়ার পর তিনি হেদায়েত হারিয়ে ফেলেন, ইবাদতে আগের মত স্পৃহা পান না। এর উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিম্নরূপ:
(১) ফিতনা:
হেদায়েত পেলেই কারো জান্নাত নিশ্চিত নয়। হেদায়েতপ্রাপ্তকে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। নানারকম ফিতনা তার সামনে আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফিতনা হলো বিপরীত লিঙ্গের ফিতনা। এসব ফিতনা থেকে বাঁচতে চোখের হিফাজত করা ও ফিতনায় পড়লে আল্লাহর দেওয়া শিক্ষার অনুযায়ী আচরণ করা জরুরি।
(২) দ্বীনদারদের সান্নিধ্যে না থাকা:
অনেকে হেদায়েত পাওয়ার পর ব্যক্তিজীবনে কেবল নামাজকে ধরে রাখেন। ইসলামের ফরজ জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করেন না, দ্বীনি মাজলিসগুলোতে যান না, আলেমদের সাথে থাকেন না। সরাসরি আলেমদের থেকে জ্ঞানার্জন করতে না পারলে অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা শোনা যেতে পারে।
(৩) সঠিক পদ্ধতিতে জ্ঞানার্জন না করা:
সদ্য হিদায়াতপ্রাপ্ত অনেককে দেখা যায় ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো বাদ দিয়ে অনেক গভীর বা ইখতিলাফি বিষয় নিয়ে পড়ে আছেন যেগুলো সম্পর্কে তার প্রাথমিক জ্ঞান নেই। কেউ হয়তো নাস্তিকদের সাথে তর্কে জড়াচ্ছে, কেউ বা শিয়া রাফেজিদের নিয়ে পড়াশোনা করে বিভ্রান্ত হচ্ছে। অথচ প্রত্যেকের জন্য জরুরি হলো দ্বীনের মৌলিক বিষয় যেমন : ঈমান, আকীদা, সালাত, পবিত্রতা, কুরআন, হাদীস, আখলাক ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা।
(৪) অহংকার করা:
অনেকেই হিদায়াত পেয়ে অহংকারী হয়ে ওঠেন, অন্য মুসলিম ভাইবোনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। পোশাক, চলাফেরা, গুনাহ কিংবা ইবাদতের দৈন্যতা নিয়ে তাদের সমালোচনা করেন, খাটো চোখে দেখেন, জাহান্নামী বলে কটাক্ষ করেন। কে হাফপ্যান্ট পরে মসজিদে এলো, কে কানে দুল পরে মসজিদে এলো, কার হিজাব পরিপূর্ণ না ইত্যাদি দোষত্রুটি ধরা শুরু করেন। এতেও হেদায়েত হারিয়ে যায়।
(৫) দুআ না করা:
অনেকেই ভাবেন হেদায়েত চিরস্থায়ী। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে দোয়া শিখিয়েছেন,
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, হেদায়েত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরকে পুনরায় বাঁকা করে দেবেন না এবং আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৮)
নবীজী সাঃ ও হেদায়েত ধরে রাখার জন্য অনেক দোয়া করতেন যেমন: يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك অর্থাৎ, হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন। সুতরাং হেদায়েত ধরে রাখতে অধিক পরিমাণে দোয়া করা জরুরি।
(৬) নিয়মিত তাওবাহ ইস্তিগফার না করা:
মানুষ হিসেবে নিজের অজান্তেই আমাদের অনেক গুনাহ হয়ে যায়। এসব গুনাহ থেকে বাঁচতে ও নিজের হেদায়েতকে নবায়ন করতে নিয়মিত তাওবাহ ইস্তিগফার করা জরুরি। গুনাহের জন্য নিয়মিত ক্ষমা প্রার্থনা না করলে গুনাহ জমতে জমতে মানুষ একসময় হেদায়েত থেকে ছিটকে পড়ে।
হারিকেনের মৃদু আলোকে যেমন বাতাস থেকে রক্ষা করতে হয়, চিমনির ভেতর অনেক যত্ন আগলে রাখতে হয়, তেমনি হেদায়েত ধরে রাখার জন্য এর যত্ন ও পরিচর্যা করা জরুরি।